মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সরদার মোঃ ইউনূছ এখন কেবল লৌহজংয়ের ইতিহাস। ১৯৭৪ সালের ২২শে এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে জনসম্মুখে একদল হায়েনা কর্তৃক নির্মমভাবে খুন হন তিনি। মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পয়শা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন সরদার মোঃ ইউনূছ।তার বাবার নাম রফিউদ্দিন সরদার।
তিনি ১৯৭০ সালে ব্রাহ্মণগাঁও হাই স্কুল থেকে এস এস সি পাশ করেন।সে বছর তৎকালীন মুন্সিগঞ্জ মহকুমায় তিনি সেরা ছাত্র নির্বাচিত হন।তিনি শুধু সেরা ছাত্রই ছিলেন না সৎ চরিত্র, পরোপকারি সুন্দর ব্যবহার আর মিষ্টি কন্ঠের জন্য সকলের প্রিয় পাত্র ছিলেন।
বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে আই এস সিতে ভর্তি হন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে।তখন রাজনৈতিক ডামাডোলে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন।স্বাধীনতার পিপাসায় বাঙালীরা তৃঞ্চার্ত।জগন্নাথের তৎকালীন উল্লেখযোগ্য ছাত্রনেতা রাজিউদ্দিন রাজু(সাবেক মন্ত্রী),কাজী ফিরোজ রশিদ(প্রাক্তন এমপি),ইকবাল হোসেন (প্রয়াত সাবেক এমপি), বৌলতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবউল্লাহ মৃধা, গাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জি এম কবির,লৌহজং মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কমান্ডার খলিলুর রহমানসহ প্রমূখ নেতাদের প্রিয় বন্ধু ছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন।তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতেন।বঙ্গবন্ধুর আহবানে মাতৃভূমিকে হায়েনার হাত থেকে মুক্ত করতে বন্ধুদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।রক্তপিপাসুদের পরাজিত করে স্বাধীনতার পর আবার কলেজে ফিরে আসেন-১৯৭২ সালে আই এস সি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে কৃতকার্য হন।
একই সাথে তৎকালীন ছাত্র সংসদের এজিএস নির্বাচিত হন।গঠনমূলক শব্দচয়ন,অমিয় যুক্তি আর মিষ্টিকন্ঠের বক্তৃতার সুবাদে খুব সহজেই নেতাদের নজর কারতে সক্ষম হন।রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও লেখাপড়ায় কখনো ছেদ পড়তে দেয়নি সে।একই সাথে চলে বি এস সি পরীক্ষার প্রস্তুতি।
ইউনূছ বি এস সি পরীক্ষা শেষ করে ছুটি কাটাতে আসে গ্রামের বাড়ি পয়শায়।মায়ের আদর আর বাবার ভালবাসায় কেটে যায় বেশ কয়েকটি দিন। বন্ধুবান্ধবদের কোলাহলে স্মৃতিময় হয়ে উঠে দিনগুলো।মা বলে,যা তোর নানীকে দেখে আয়! লৌহজং এর ঝাউটিয়ায় ছিল নানার বাড়ি।
বৈশাখ মাসের শেষের দিকে আজকের এই দিনে (২২ শে এপ্রিল)পাট আর ধইঞ্চায় পরিপূর্ণ জমিগুলো। দখিনা বাতাস যেন ঢেউ খেলে যায়। জমির পাশ দিয়ে হেটে গেলে শরীর রোমাঞ্চিত হয়। পড়ন্ত বিকালে মায়ের কথামত নানীর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে ঝাউটিয়া রওনা হয় ইউনূছ। কুড়িগাঁও মঙ্গল শিকদারের বাড়ির দক্ষিণ দিকের খাল পাড় হওয়ার পরেই পাটক্ষেতে লুকিয়ে থাকা একদল সন্ত্রাসী খুব সামনে থেকে গুলি করে ইউনূছের পেটে।গুলির আঘাতে ভূড়ি বের হয়ে যায়। সেই পেট ধরেই বাঁচার জন্য দৌঁড় দেয় ইউনূছ।
আশেপাশে জমিতে অনেক লোক কৃষি কাজ করছিল।সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।
সেই পেট ধরেই প্রায় আধা কিলোমিটার দৌঁড়ানোর পরে কলিকাতা ভোগদিয়া নেকবর আলী শেখের বাড়ির উঠানে গিয়ে পড়ে যায়।বাড়ির লোকজন বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসলে ও খুনীরা তাদের চোখের সামনেই তার কপালে অস্ত্র ঠেকিয়ে আবারো গুলি করে নির্মমভাবে তাকে খুন করে।