জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলের উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।তারা বলেছেন, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে একের পর এক দূর্যোগ আঘাত হানছে। ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ,পানি সংকট নিরসন ও বনায়নসহ অন্যান্য প্রকল্প নিলেও বাজেটের অভাবে যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।এ কারণে উপকূলের উন্নয়নে আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া জরুরি।
আজ শনিবার ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফান থেকে মোখা : কেমন আছে উপকূল?’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তারা এ সব কথা বলেন। প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তিন বর্ষপূর্তি উপলক্ষে উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটারকিপারস-বাংলাদেশ,লিডার্স,সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা(স্কাস),ফেইথ ইন একশন, সচেতন সংস্থা এবং সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র-এর সঞ্চালনায় সভায় মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল। আলোচনায় অংশ নেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী,ওয়াল্ড কনসার্নের কান্ট্রি ডিরেক্টর গ্লোরিয়াস গ্রাগরি দাস,এসকেএস ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক জোসেফ হালদার,স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল,স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা,স্বদেশ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত,সাতক্ষীরার নাগরিক নেতা আবুল কালাম আজাদ,ফেইথ ইন একশনের জ্যাকব টিটো, কোষ্টাল ভয়েসের কৌশিক দে বাপি,শিশু অধিকার ফোরামের সাফিয়া সামি,সচেতন সংস্থার রিয়াদ হোসেন,উন্নয়নকর্মী মো.আফতাবুজ্জামান,পরিবেশ কর্মী এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব,অধ্যক্ষ জিএম আমিনুল ইসলাম প্রমূখ।সংলাপে বক্তারা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলেন, করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার মধ্যে সুপার সাইক্লোন আম্ফান উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।এরপর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি।বরং এরপর ইয়াস ও মোখার মতো একাধিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে।ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শতাধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।তাই চলতি ঝড়ো মৌসুমে চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ওই অঞ্চলের জনগণ।এই ঝুঁকি মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।সংলাপে উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক বোর্ড গঠনের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, ভৌগলিক অবস্থান,ঘনঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগ,ভঙ্গুর অবকাঠামো,দারিদ্রতা,দীর্ঘমেয়াদী লবনাক্ততা, সংকটাপন্ন কৃষি,প্রভৃতির কারণে উপকূলীয় এলাকার মধ্যে সাতক্ষীরা,খুলনা ও বাগেরহাট সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।ওই এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেই উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।এই সংকট মোকাবেলায় দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলকে দূর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে ঝুঁকিতে থাকা বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে।উপকূলীয় জনগণের নিরাপদ খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফান দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে।এতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়।এক বছর পার হলেও সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষ।