রিপোর্টারঃ সাইফুল হাসান,বিশেষ প্রতিনিধি
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কর্তৃক একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইশারত হোসেন নামে এক ব্যক্তি। রবিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের লোকাল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নিজ ভাড়া বাসায় এই সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী ইশারত হোসেন।
অভিযোগকারী ইশারত হোসেন পৌর এলাকার মিঠাপুর চরপাড়া এলাকার মৃত মোকছেদ মোল্যার বড় ছেলে। অপরদিকে অভিযুক্ত হলেন মোকছেদ মোল্যার ছোট ছেলে সৌদি প্রবাসী জামির হোসেনের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করে ইশারত হোসেন বলেন, তার আপন ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী জামির হোসেনের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম গত কয়েক বছর ধরে তার নামে থানায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার ছোট ভাই দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় আঞ্জুয়ারা নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করেন এবং একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আরও বলেন, এই কাজে বাঁধা দিতে গেলে আঞ্জুয়ারার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ইশারত হোসেন এসব কাজে বাধা ও প্রতিবাদ করলে, আঞ্জুয়ারা তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে মনগড়া, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং মামলা দায়ের করেন।
ইশারত হোসেন জানান, শুধু অভিযোগ নয়, ইতোমধ্যেই আঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে ২০২২ সালের জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে থানায় একটি ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়ের করেছিলেন। পরবর্তীতে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে ইশারত হোসেনের কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আঞ্জুয়ারাকে ‘মামলাবাজ’ আখ্যা দিয়ে ইশারত হোসেন বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় মিথ্যা নাটক সাজিয়ে তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর আদালতে তার বিরুদ্ধে আরও একটি মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টা মামলা করেন। ইশারত হোসেন দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি আলফাডাঙ্গা সদরে তার ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন, আপনারা মামলার প্রধান সাক্ষী ও তিন নম্বর সাক্ষী, যিনি তার আপন চাচা আব্দুল হক মোল্যা, তার সঙ্গে কথা বললেই বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বরের বাড়ির সিসি ক্যামেরা যাচাই করলে দেখা যাবে যে তিনি ওইদিন বাড়িতেই যাননি। এর আগে তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগের সময়ও সিসি ক্যামেরা যাচাই করে আলফাডাঙ্গা থানার বিভিন্ন তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ পেয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে ইশারত হোসেন বলেন, সর্বশেষ চলতি মাসের ১০ অক্টোবর তার বৃদ্ধা মাকে ভাড়া বাসা থেকে রান্না করা খাবার খাওয়াতে তিনি বাড়িতে গেলে আঞ্জুয়ারা বেগম চিৎকার করে বলেন যে, তিনি (ইশারত) তাকে হামলা করার উদ্দেশ্যে বাড়িতে গিয়েছেন। অথচ তার স্ত্রী ও সন্তানদের বাড়ি থেকে প্রায় ২০ গজ দূর থেকে তিনি মোটরসাইকেলে নামিয়ে দেন। ওই দিনের সিসি ক্যামেরা যাচাই করলে সত্যতা মিলবে।
ইশারত জানান, ওই দিন রাতে বিষয়টি তার স্ত্রীসহ আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) স্যারকে জানালেও পূর্বে তার করা একটি সাধারণ ডায়েরি থাকায় কর্তৃপক্ষ তার লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেনি। তিনি অভিযোগ করেন, তার ছোট ভাই প্রায় দশ বছর ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং তার স্ত্রীর এমন আচরণের কারণেই তিনি দেশে আসেন না। এমনকি তার বৃদ্ধা মাতা হাজেরা বেগমসহ পরিবারের সবার সাথে আঞ্জুয়ারা সবসময় খারাপ ব্যবহার করেন বলেও তিনি দাবি করেন।
আঞ্জুয়ারা বেগমের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাসায় থাকেন দাবী করে ইশারত হোসেন জানান, আঞ্জুয়ারা বেগমের দায়ের করা একাধিক মিথ্যা মামলার কারণে বর্তমানে তার ভয়ে তিনি আলফাডাঙ্গা সদর বাজারে ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি আলফাডাঙ্গা সদর বাজারে ফুটপাতে জুতা-স্যান্ডেলের ব্যবসা করেন এবং বাসা ভাড়া দিয়ে চলতে তার অনেক কষ্ট হয়। তিনি বারবার মিথ্যা অভিযোগ ও মামলার শিকার হচ্ছেন দাবি করে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান, আমি চাই আপনারা সরেজমিন গিয়ে সত্যতা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত সংবাদটি সবার সামনে তুলে ধরুন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে ইশারত হোসেনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার বৃদ্ধা মাতা হাজেরা বেগম, অপর সহোদর সাখাওত হোসেন এবং বোন মজিরন বেগম।