উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়নে উপকূল সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়ে ১২ নভেম্বর ২০২২ ষষ্ঠ বারের মত ‘উপকূল দিবস পালিত হয়। সকাল ১১:০০ টায় শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ বাজারে সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সামনে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স ও সুন্দরবন প্রেসক্লাব এর আয়োজনে ‘উপকূল দিবস’পালনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়
উপকূল দিবস পালন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সদস্য ও সাবেক সম্পাদক মোঃ বেলাল হোসেন, আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোঃ শহিদুল ইসলাম, লিডার্স এর এ্যাডভোকেসি অফিসার পরিতোষ কুমার বৈদ্য প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, ‘১২ নভেম্বর ১৯৭০ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলের সব কিছু তছনছ করে দেয়।উপকূল দিবসে আমাদের আহ্বান থাকবে যাতে ১২ নভেম্বর উপকূল দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়।জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে উপকূলের মানুষ দেশের অন্য এলাকার চেয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছেন।এজন্য এ এলাকার জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। টেকসই বেড়িবাঁধ সহ সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে না পারলে উপকূলের মানুষ আর টিকে থাকতে পারবে না।বক্তারা আরও বলেন,ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে উপকূলবাসীর জীবনে সংকট বেড়েছে। অনেক মানুষ বসবাস করতে না পেরে উপকূল ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যাচ্ছে।সব কিছু হারিয়ে উপকূলে টিকে থাকা এক ধরনের সংগ্রাম। এই সংগ্রাম থেকে উপকূলের মানুষ বাঁচতে চায়।
১২ই নভেম্বর ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চল।নিশ্চিহ্ন হয় বহু পরিবার।অনেকে আত্মীয়স্বজন,বাবা-মা,ভাই-বোন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াল এ ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ১০লক্ষাধিক লোক মৃত্যুবরণ করে(বেসরকারী হিসাবে)।ভয়াবহ সেদিনের ৫৩ বছর অতিবাহিত হলেও আজও সে দুর্বিসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলের বাসিন্দাদের।
দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল সুরক্ষায় ভুক্তভোগী মানুষ ও সুশীল সমাজ যে সকল দাবী তুলে ধরেছেন, ১. ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস হিসাবে ঘোষণা করতে হবে। ২.সাতক্ষীরা,খুলনা ও বাগেরহাট জেলাকে জলবায়ু ঝুঁকিপুর্ন বা দুর্যোগ ঝুঁকিপুর্ন এলাকা ঘোষনা করতে হবে,৩.দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাজেটে বিশেষ বরাদ্ধ দিতে হবে, ৪.জলবায়ু ঝুঁকি,দারিদ্র্য ও বিপদাপন্নতার মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার অধীন উপকূল সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির (বিশেষ করে নগদ ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি)আওয়তা ও পরিধি বাড়াতে হবে, ৫. উপকুলীয় এলাকায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে একটি বাড়ি একটি সেল্টার কার্যক্রম শুরু করতে হবে, ৬.জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ পুন:নির্মান করতে হবে, ৭.দ্রুততার সাথে ভঙ্গুর স্লুইস গেটগুলো মেরামত করতে হবে, ৮.জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারসহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, ৯.উপকূলীয় সকল মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করতে হবে, ১০.উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে, ১১.ঝড়-ঝঞ্ঝা,নদীভাঙ্গন ও ভূমিক্ষয় ঠেকাতে উপকূল, দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি গ্রহণ এবং প্যারাবন বা সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে, ১২. উপকুলের রক্ষাকবচ সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।