নিজস্ব প্রতিনিধি
রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিয়ে করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাইফ জামান আনন্দ। ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে করেন তিনি। তার আগে ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল কেন্দ্রঘোষিত আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন এই ছাত্রলীগ নেতা।
এরপর ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তবে তিন বছর ধরে বিয়ের তথ্য গোপন করে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রয়েছেন ডা. সাইফ জামান আনন্দ। আবার নতুন করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হতে লবিং তদবির করছেন বিবাহিত এ নেতা।
জেলা ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, ‘সাধারণ সম্পাদক সাইফ জামান বিয়ে করেছেন কি-না জানি না। তবে তিনি পরবর্তী কমিটির সভাপতি হতে লবিং তদবির করছেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হতে বিয়ের তথ্য গোপন করে থাকতে পারেন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ বিবাহিতদের ছাত্রলীগের কোনো পদ দেওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা অমান্য করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদে রাখা হয় বিবাহিত ডা. সাইফ জামান আনন্দকে। তবে বিয়ের আগেই আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শলুয়ার ভূবননগরের আবুল হোসেনের মেয়ে হুমায়বা আফরোজ দিশাকে বিয়ে করেছেন সাইফ জামান। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের লাখেরাজপাড়ার মরিুজ্জামানের ছেলে। বিয়ের দেনমোহর করা হয় ১২ লাখ টাকা। গহনা বাবদ ৫ লাখ টাকা নগদ ও ৭ লাখ টাকা বাকিতে বিয়ে করেছেন এ ছাত্রলীগ নেতা। নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজী মো. নুরুল ইসলাম এ বিয়ে নিবন্ধন করেছেন। কাবিননামার একটি কপি সাংবাদিকদের হাতে রয়েছে। নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজী মো. নুরুল ইসলাম এ বিয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা জানান, বিবাহিতদের বিষয়ে গঠনতন্ত্রে কিছু বলা নেই। তবে শেখ হাসিনার নির্দেশের কারণে বিবাহিতদের কোেনা পদে না রাখা অলিখিত নিয়ম বলেই মনে করা হয় ছাত্রলীগে। সেই ‘নিয়ম’ সবাই মানতে বাধ্য। কেউ যদি তথ্য গোপন করে পদ দখল করে বা পদে আসার পর বিয়ে করে তাহলে কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্র সংগঠনে বিবাহিতদের নেতৃত্বে থাকার সুযোগ নেই।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ এক বছর। অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটিতে চার বছর পার হলেও সম্মেলন হয়নি। এমনকি কবে সম্মেলন হতে পারে, নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী ছাত্রনেতারাও বছরের পর বছর অপেক্ষায় থেকে এখন হতাশ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার বিষয়ে চেষ্টার কথা স্বীকার করলেও বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাইফ জামান আনন্দ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খান জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ, বিবাহিতদের ছাত্রলীগের কোন পদ দেওয়া যাবে না। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান বাদল স্ত্রী-সন্তান রেখে মারা যাওয়ার পর এই নির্দেশ জারি করেন তিনি। এরপর থেকে বিবাহিতদের ছাত্রলীগের কমিটিতে রাখা হয় না। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার তো প্রশ্নই আসে না। আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিয়ের বিষয়টি আমরা জানি। তবে এটি আমরা এখনও যাচাই-বাছাই করিনি। কারণ দায়ভার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের। তারা (কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদক) যদি কোনো বিবাহিতকে নেতা বানান সে দায়ভার তাদের। তারা নির্বাহী কমিটির সঙ্গে কোনো সমন্বয় করে না, মিটিং হয় না। এ কারণে অনেক সময় এসব তথ্য গোপন থেকে যায়।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।