অনলাইন ডেস্ক:
টাঙ্গাইলে মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণে ডাকাতের নেতৃত্বে দেন রতন হোসেন। তার এই পরিকল্পনায় অংশ নেন তিনিসহ মোট ১৩ জন। মাত্র ২১ বছর বয়সী রতন পেশায় বাসচালকের সহকারী (হেলপার)। দিনের বেলায় বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। তবে রাতের আড়ালে ভিন্ন রূপ নেন তিনি। রাতে বিভিন্ন বাসে ডাকাতি করতেন রতন। এর আগেও ১০টি বাসে ডাকাতির নেতৃত্ব দেন তিনি।
টাঙ্গাইলে চাঞ্চল্যকর ঘটনায় গ্রেফতার ১০ জন এমন তথ্য দিয়েছেন র্যাবকে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে (৩ আগস্ট) টাঙ্গাইল মহাসড়কে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেসের একটি পরিবহনে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে। আলোচিত ওই ঘটনায় এক যাত্রী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলার পর জড়িতদের ধরতে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গ্রেফতাররা হলেন- ডাকাত চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেন (২১), আলাউদ্দিন (২৪), সোহাগ মন্ডল (২০), খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু (২৩), বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস (২১), জীবন (২১), আব্দুল মান্নান (২২), নাঈম সরকার (১৯), রাসেল তালুকদার (৩২) ও আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান (১৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০টি মোবাইল, দুটি রূপার চুড়ি, ১৪টি সিমকার্ড ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি দেশীয় অস্ত্র (ক্ষুর) উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, ডাকাত দলের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন রতন মিয়া। ডাকাতির তিন দিন আগে সহযোগী ডাকাত রাজা মিয়াকে বাস ডাকাতির প্রস্তাব দেন তিনি। রাজা মিয়া দলের অন্য ডাকাতদের সংঘটিত করার কথা বলেন। পরে গ্রেফতার রতন, মান্নান, জীবন, দীপু, আউয়াল ও নুরনবীকে ডাকাতির পরিকল্পনার কথা জানান। এরপর ডাকাত মান্নান তার সহযোগী সোহাগ, আসলাম, রাসেল, নাঈম ও আলাউদ্দিনকে নিয়ে ডাকাতিতে যোগ দেন। ডাকাতিতে রতনের নেতৃত্বে মোট ১৩ জন অংশ নেন।
বাসটিতে ২৪ জন সাধারণ যাত্রী থাকায় ডাকাত চক্রের অধিকাংশ সদস্য বাসের পেছনের দিকে বসেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এলাকা অতিক্রম করলে রতন ডাকাত দলের সদস্যদেরকে চাকু ও ধারালো কাঁচি দেন। তখন ধূমপানের কথা বলে বাসের গেটের কাছে যান আউয়াল। তিনি অন্যান্যদের ইশারা দিলে রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী বাসচালকের সিটের কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে মারধর করেন এবং রতন বাসের ড্রাইভিং সিটে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন।
ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদের হাত মুখ বেঁধে সিট কভার দিয়ে ঢেকে দেন। এরপর তারা যাত্রীদের সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেন। তাছাড়া এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেন।
র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আরও জানান, পরে টাঙ্গাইলের হাটুভাঙ্গা মোড় হয়ে মধুপুরে যাওয়ার পথে মধুপুরের রক্তিপড়া এলাকায় লুট করা মালামাল নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। সেসময় রতন গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় পেছনে তাকালে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে হেলে পড়ে। এরপর ডাকাতদলের সবাই লুটের মালামালসহ বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান।
পরে অন্য বাসে করে ডাকাত চক্রের সদস্যরা টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় যান এবং মধুপুরের কুড়ালিয়া এলাকায় রতনের নিকটাত্মীয়ের ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে লুণ্ঠিত মালামাল নিজেদের মধ্যে বণ্টন করেন। এরপর রতন গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় আত্মগোপন করেন। মান্নান, আলাউদ্দিন ও বাবু পৃথকভাবে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকায় আত্মগোপন করেন। তাছাড়া আসলাম, নাঈম, রাসেল প্রথমে নিজের এলাকায় ও পরে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকায় আত্মগোপন করেন।