পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় ১৩তম হয়েছেন লীজা আকতার।মাইকে তাঁর নাম ঘোষণা হতেই আনন্দে কেঁদে ওঠেন তিনি।তাঁর এই কান্না সেখানে উপস্থিত সবাইকে ছুঁয়ে যায়।সবাই লীজাকে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান।এখন থেকে পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচাতে ভূমিকা রাখতে পারবেন তিনিও।এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কী হতে পারে!লীজা আকতারের বাড়ি বগুড়া শহরের মালগ্রাম জিলাদারপাড়ায়।ওই গ্রামের দিনমজুর লিটন জিলাদারের মেয়ে তিনি।দুই বোন আর মা-বাবা নিয়ে তাঁদের পরিবার।গতকাল রোববার রাতে বগুড়া পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষার এই চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়।লীজা আকতার বলেন,তাঁর বাবা দিনমজুরের কাজ করেন।মা নাসরিন বেগম কাজ করেন এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে।এর মধ্যেও উচ্চমাধ্যমিক পাস করে সরকারি শাহ সুলতান কলেজে স্নাতক(পাস)কোর্সে ভর্তি হয়েছেন তিনি।ছোট বোন ফাতেমা আকতার শহরের একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে।পড়াশোনার পাশাপাশি লীজা দুই বছর ধরে টিউশনি করেন।লীজা আরও বলেন,আজ পুলিশে চাকরি পেয়ে তিনি আনন্দিত।এখন তাঁদের সংসারে আর অভাব থাকবে না।মা-বাবাকে আর অমানসিক পরিশ্রম করতে হবে না।টাকার অভাবে ছোট বোনের পড়াশোনা ব্যাহত হবে না।লীজার মতো আজ আনন্দিত আরও অনেকেই। তাঁরা হলেন শেরপুরের নলডিঙ্গী গ্রামের অটোরিকশাচালক রেজাউল করিমের মেয়ে রুবাইয়া আকতার,খানপুর গ্রামের পিতৃহারা হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে সমাপ্তি খাতুন, শেরপুরের বিনোদপুর গ্রামের দিনমজুর ইউছুফ আলীর ছেলে জুয়েল মাহমুদ,ধুনটের সাতবেকী গ্রামের দিনমজুর শহিদুলের ছেলে রিমন হোসেন, নন্দীগ্রামের আপুসগাড়ি গ্রামের ভ্যানচালক কুদ্দুস আলীর ছেলে লিটন মিয়া,সরকারি এতিমখানায় বড় হওয়া ইউছুফ আলী।তাঁরাও আজ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।বগুড়ায় এবার পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ১১০জন পুরুষ এবং ১৯জন নারী।এর মধ্যে হতদরিদ্র এবং অসচ্ছল পরিবারের সদস্যের সংখ্যাই বেশি।জানা গেছে,গত ডিসেম্বরে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১২৯ পদের বিপরীতে আবেদন করেন ৪হাজার ৫১৫নারী-পুরুষ। প্রাথমিক বাছাই শেষে ২হাজার ৮৩০পুরুষ এবং ৪৮৭জন নারীসহ ৩হাজার ৩১৭জনকে শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। ২মার্চ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়।বিভিন্ন ধাপে বাছাই শেষে ৯ মার্চ লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৯৬৬জন পুরুষ, ১২৬জন নারীসহ মোট ১হাজার ৯২জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ২৯২ জন পুরুষ এবং ৩৫ জন নারী।গতকাল সকাল ১০টায় শুরু হয় ৩২৭ জনের মৌখিক পরীক্ষা।রাত ১১টার দিকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ১১০জন পুরুষ এবং ১৯জন নারীর নাম ঘোষণা করা হয়।
পরে নির্বাচিত প্রত্যেককে ফুল দিয়ে বরণ করার পাশাপাশি মিষ্টিমুখ করানো হয় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে।পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও বগুড়ার পুলিশ সুপার(এসপি)সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন,‘নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছ ও প্রভাবমুক্ত হয়েছে।নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে বলা হয়,নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে।কোনো প্রার্থী যেন দালালের খপ্পরে না পড়েন।একারণে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ফিরে আসে।আমরাও মেধার ভিত্তিতে ১২৯জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করতে পেরেছি।
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আরও বলেন,কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে।যে কারণে লিখিত পরীক্ষায় একজন প্রার্থীও অনুপস্থিত ছিলেন না।গত বছর নিয়োগে আবেদনকারী ছিলেন ৩ হাজার ৬০জন।মানুষের আস্থা বেড়ে যাওয়ায় এবার প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৪হাজার ৫১৫