বাংলাদেশের দূতাবাসে জাতীয় শোক দিবস পালিত এবং বঙ্গবন্ধুর “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”ব্রাজিলিয়ান পর্তুগীজ ভাষায় অনুবাদের ঘোষণা।
বিনম্র শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য ভাবগম্ভীর পরিবেশে দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র বাংলাদেশ দূতাবাস ব্রাসিলিয়াতে প্রবাসী বাঙালী এবং ব্রাজিলিয়ান অতিথিদের সাথে নিয়ে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতার ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা হয়।
খবর বাপসনিউজ।
দিনের শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীতের সাথে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা কর্তৃক জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মাধ্যমে শোক দিবস পালন শুরু হয়।১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে শাহাদাত বরণকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সকলের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।এরপর রাষ্ট্রদূত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।আলোচনায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রাম ও বাঙালী জাতির ইতিহাসে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের কথা উল্লেখ করে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন।ব্রাজিলে নিযুক্ত প্রতিরক্ষা এটাশে কমোডোর সৈয়দ মিসবাহউদ্দিন আহমেদ ১৫ই আগস্টের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের শোক দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন মূল্যবান বক্তব্য রাখেন।
১৫ আগষ্টে নির্মম হত্যাকান্ডে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।জাতীয় শোক দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রতিনিধি দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক অ্যালোইসিও বারবোসা, ভারতীয় দূতাবাসের ডেপুটি চীফ অফ মিশন বৈষ্ণব প্রধান, ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ডঃ ভিরজিলিও আলমেইদা, বিদেশী ভাষা ও অনুবাদ বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আলেজান্দ্রে রামোস ও বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সন্ধ্যায় পৃথক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এ সময় বঙ্গবন্ধুর সকল রাজনৈতিক আন্দোলন,মহান স্বাধীনতা অর্জনে তাঁর অবিস্মরনীয় অবদান,যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বিক পুনর্গঠন এবং অল্পসময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের কূটনৈতিক সকল অর্জনকে উপজীব্য করে নির্মিত একটি তথ্য চিত্র দেখানো হয়।
উল্লেখ্য,জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে দূতাবাস হতে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং অন্যান্য দেশের দূতাবাসে কূটনৈতিক বার্তা প্রেরণ করা হয়। ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের শোক দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রদূত বরাবর একটি শোকবার্তা প্রেরণ করে।এছাড়াও আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিদেশী অতিথিগণসহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা শোকবইয়ে স্বাক্ষর করেন।ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক অ্যালোইসিও বারবোসা বঙ্গবন্ধুকে শুধু বাংলাদেশের জাতির পিতাই নন, সমগ্র বিশ্বের শান্তির দূত হিসেবে আখ্যায়িত করেন।আমন্ত্রিত ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক অতিথিদের মধ্য থেকে মিজ ফাবিয়ান চৌহান, মিঃ ইভান গোদুই ও মিজ লিজ লোবো ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ভ্রমণকালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের মূল্যবান স্মৃতিচারণ করেন।সাংবাদিক ইভান গোদুই ফিদেল কাস্ত্রোর অমর উক্তি হিমালয়ের সাথে তুলনা করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রকাশ করেন।
মান্যবর রাষ্ট্রদূতের নিরলস প্রচেষ্টা ও দূতাবাসের সার্বিক সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ব্রাজিলের পর্তুগীজ ভাষায় অনুবাদের উদ্দেশ্যে অনুবাদক হিসেবে ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ আলেসান্দ্রা রামোসের নাম ঘোষণা করা হয়।তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন কালজয়ী নেতার আত্মজীবনী অনুবাদের সুযোগ পেয়ে তিনি গর্বিত। তিনি আরও বলেন এটি তাঁর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক অর্জন হয়ে থাকবে।এ সময় ডঃ আলেসান্দ্রা রামোস অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পর্তুগীজ অনুবাদ থেকে এক পৃষ্ঠা পাঠ করেন।ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সেক্রেটারি ডঃ ভার্জিলিও আলমেইদা বলেন শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নন, তিনি সকল শোষিত মানুষের নেতা। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ব্রাজিলীয় পর্তুগীজ ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী ও ক্ষুরধার আত্মজীবনী ব্রাজিলের জনগণ সম্যক অনুধাবন করতে পারবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।মান্যবর রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দেবার জন্য বঙ্গবন্ধুকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে স্বাধীনতার অব্যহিত পরেই কূটনৈতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গৃহীত নানা পদক্ষপের কথা উল্লেখ করেন।তিনি বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের প্রত্যেকের সাজা কার্যকর করার জোর দাবি জানান।বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ক্রমঅগ্রসরমান উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।শোককে শক্তিতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আরো বেশী নিবেদিত হয়ে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান। উল্লেখ্য,পুরো আগষ্ট মাসব্যাপী দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের বিভিন্ন আলোকচিত্রের সমন্বয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ও সার্বক্ষণিক আলোকচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।