গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে শিক্ষকদের সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল(জিপিএফ)থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।এ নিয়ে পাঁচজন শিক্ষক মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।ভুক্তভোগী শিক্ষকরা এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারি এবং উপজেলা হিসাব ও অর্থ অফিসকে দায়ি করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে,সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রাজিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আতাউর রহমানের নামে ৭০হাজার,কালির খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রহিমা বেগমের নামে ২লাখ ৫৯ হাজার,দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বপ্না রানী নামে ২লাখ ৬৪হাজার,পূর্ব বজরা হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার বেগম এর নামে ৭০হাজার এবং নতুন দুলাল ভরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাসুদা বেগমের নামে ১লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।কিন্তু তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
শিক্ষক আতাউর রহমান জানান,জিপিএফ তহবিল থেকে ঋণ নিতে প্রথমে আবেদনপত্র পূরণ করে উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়।তার সীল ও স্বাক্ষরের পরেই সেই আবেদনপত্র উপজেলা হিসাব ও অর্থ অফিসে পাঠানো হয়।সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে অর্থ ছাড় করা হয়।পরে তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের ব্যাংক হিসেবে ঋণের টাকা জমা হয়।তিনি আরও বলেন,জিপিএফ তহবিল থেকে ঋণ বিষয়ে তিনি কোনদিন শিক্ষা অফিসে যায়নি কোনো আবেদন করেন নাই।তার হিসাব নম্বরে কোন টাকা জমা হয় নাই। এমনকি বেতন থেকে কিস্তি বাবদ কোন টাকাও কাটা হয়নি অথচ জিপিএফ ফান্ড থেকে ৭০হাজার টাকা ঋন দেখানো হচ্ছে। ২০২১ সালের ১ডিসেম্বর লোন দেখিয়ে সেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।শিক্ষক রহিমা বেগম জানান,তিনি শিক্ষা অফিসে অনেকদিন ধরে যান না। অথচ জিপিএফ তহবিল থেকে তার নামে ২লাখ ৫৯ হাজার ঋন দেখানো হচ্ছে। অন্য শিক্ষকরাও একই অভিযোগ করেন।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পাঁচজন শিক্ষক গত ২৭সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক,উপ-পরিচালক রংপুর,দুদক,জেলা প্রশাসক,জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।অভিযোগে উল্লেখ করা হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক শিক্ষকের জিপিএফ হিসাবের বিপরীতে ঋণ উত্তোলন পূর্বক আত্মসাতের অভিযোগ করেন।উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অভিযোগ পত্রটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেন।(যার স্মারক নং-উশঅ/সুন্দর/গাই/২০২২/৫৭৭)
এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ.কে.এম.হারুন-উর-রশিদ অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিক সরকারকে ১৩ সেপ্টেম্বর(ব্যাকডেটে)এক অফিস আদেশে দপ্তরের যাবতীয় আর্থিক অন্যান্য কার্যক্রম হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ.কে.এম.হারুন-উর-রশিদ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।তার দৃষ্টি এড়িয়ে এ কাজগুলো করেছেন অফিসের মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক।শিক্ষকদের অভিযোগ পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছি।তারাই ব্যবস্থা নেবে।
উপজেলা হিসাব ও অর্থ কর্মকর্তা মোঃ রাজিবুল ইসলাম বলেন,এখানে তাদের কোন দায় নেই।সব দায়দায়িত্ব উপজেলা শিক্ষা অফিসের।শিক্ষা অফিস যে ভাবে বিল বা অর্থ ছাড় করতে কাগজপত্র পাঠায়,তারা সেগুলো যাচাই করে সঠিক থাকলে অর্থ ছাড় করেন।
এ বিষয়ে অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিকে মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন,২৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।অথচ শিক্ষা অফিসার অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিককে ১৩সেপ্টেম্বর(ব্যাকডেটে)এক অফিস আদেশে দপ্তরের যাবতীয় আর্থিক অন্যান্য কার্যক্রম হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেন।তারা আরও বলেন,উপজেলা শিক্ষা অফিসার নিজেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা থেকে আড়াল করতে অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিকে তার কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
হারুন অর রশিদ রাজু
সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধা
প্রতিনিধি
০১৭৪০১৫৬২১৩
০৩/১০/২০২২