পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় রাজাকার পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে জেপির কমিটি গঠনের অভিযোগ।
আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি(জেপি)১০২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে একাধিক রাজাকার পরিবারের সদস্য রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব এই কমিটির অনুমোদন দেন।এ দলটি উপজেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।কেমিটিতে একাধিক রাজাকার পরিবারের সদস্য রাখায় পিরোজপুর-২ আসনে চলছে নানা গুঞ্জন। এছাড়াও যেখানে এই প্রথমবারের মতো একটি রাজনৈতিক দল এক উপজেলায় ২জন সভাপতি ও ২ জন সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেছে যা নিয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনা ও হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে মনিরুল হক মনি জোমাদ্দারকে আর কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মাহিবুল হোসেন মাহিমকে।বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো.সিদ্দিকুর রহমান টুলুকে উপদেষ্টা সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিয়ে নতুন করে আতিকুল ইসলাম উজ্জ্বল তালুকদারকে করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক।
একই কমিটিতে কীভাবে দুইজন সভাপতি ও দুজন সাধারণ সম্পাদক হয়,এ নিয়ে দলের মধ্যে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।পাশাপশি নবনির্বাচিত সভাপতি মনিরুল হক মনি জোমাদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জ্বল তালুকদারের পরিবার যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের পরও কীভাবে মহাজোটের শরিক একটি দলের কমিটিতে তারা স্থান পেল,তা নিয়ে জনমনে নান প্রশ্নের দেখা দিয়েছে।
উপজেলার যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল আজিজ শিকদার ও ভাণ্ডারিয়ার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খান এনায়েত করিম এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও অন্য কমান্ডারদের দাবি,মনিরুল হক মনি জোমাদ্দারের বাবা আব্দুল মজিদ জোমাদ্দার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পূর্ব পাকিস্তান ভাণ্ডারিয়া উপজেলা শান্তি কমিটির(পিস কমিটি)তৎকালীন সভাপতি এবং নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জ্বল তালুকদাররের বাবা আশরাফ তালুকদার ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ভাণ্ডারিয়া উপজেলা শান্তি কমিটির(পিস কমিটি)সাধারণ সম্পাদক।এছাড়া জেপির ভাণ্ডারিয়া কমিটির সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার জোমাদ্দারের বাবা নুরুল হক জোমাদ্দার ছিলেন স্বীকৃত রাজাকার, যাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধরত বাঙালি মুক্তিবাহিনীকে দমন করা।সে সময়ের শান্তি কমিটির বিভিন্ন অফিসিয়াল কাগজে আব্দুল মজিদ জোমাদ্দার ও আশরাফ আলী তালুকদারের সিল সংবলিত স্বাক্ষর করা নথিও তাদের কাছে আছে বলে দাবি করেন তারা।
ভান্ডারিয়া উপজেলার রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাণ্ডারিয়ায় তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন এবং ধর্ষণ,লুট, অগ্নিসংযোগের অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপ দ্বারা নিরীহ মানুষের ওপর যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছিলেন।সেই রাজাকার ও শান্তিবাহিনীর সক্রিয় সদস্যদের সন্তানদের দিয়ে কীভাবে মহাজোট সরকারের সমর্থিত দল জাতীয় পার্টির(জেপি)উপজেলা কমিটি হয়,তা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির জোটের শরিক হয়েও জাতীয় পার্টির জেপি এই কমিটির মাধ্যমে রাজাকার পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় কি না,তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।একই কমিটিতে দুই সভাপতি ও দুই সাধারণ সম্পাদক এবং কমিটির মাধ্যমে ভাণ্ডারিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার থেকে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার ঝড় চলছে।কেউ কেউ প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন।
এর আগে ২০২০ সালের ২২শে নভেম্বর জেপির ভাণ্ডারিয়া উপজেলার নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জ্বল তালুকদারের নারী কেলেঙ্কারির পৃথক দুটি আপত্তিকর ভিডিও এবং একটি অডিও ফাঁস হয়।যে ভিডিও ও অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তখন থেকেই জেপির এক অংশ তার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল।
জেপির নতুন কমিটির মনিরুল হক মনি জোমাদ্দার এর সাথে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার তার মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে জেপির নতুন কমিটির ও আতিকুল ইসলাম তালুকদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে।তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত।