রিপোর্টারঃ ইউ আর রাজ–দহগ্রাম ইউনিয়ন বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার একটি ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ছিটমহল নামে পরিচিত ছিল যা ১৯৯২ সালের ২৬ জুন ইন্দিরা মুজিব চুক্তির আলোকে দিনে ছয় ঘন্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়।যা সকাল ছয়টা থেকে এক ঘন্টা পরপর খুলে দিতো এবং সন্ধ্যা ছয়টার পরে বন্ধ করে দেওয়া হতো এবং পরদিন সকাল ছয়টায় আবার খুলে দেওয়া হতো।এরপর ২০১১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডোরটি ২৪ ঘন্টাই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।দহগ্রাম ইউনিয়ন,যা ভারতের মূল ভূখন্ডের মধ্যে অবস্থিত।এর তিন দিকে ভারতের কুচবিহার জেলা, একদিকে তিস্তা নদী,নদীর ওপারেও ভারতীয় ভূখণ্ড। ভৌগলিক কারণে এটি দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ছিটমহল নামেই বেশি পরিচিত।এ ইউনিয়নের মোট আয়তন ২২.৬৮ বর্গ কিমি.ও মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০,০০০ জনেরও বেশি। ১৯৮৫ সালে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল একত্রে পাটগ্রাম উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন (দহগ্রাম ইউনিয়ন)হিসেবে ঘোষণা করা হয়।১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগস্টে এখানে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্বোধন করা হয়।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগের সময় তদানিন্তন বাংলা প্রদেশটি ব্রিটিশ শাসকেরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করে দেয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে দহগ্রাম,যা ভারতীয় ভূখন্ড দ্বারা চারিদিকে পরিবেষ্ঠিত,তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে পড়ে।এটি ছিল ভারতে অবস্থিত পাকিস্তানের বৃহত্তম ছিটমহল। ১৯৫৩ সালের পূর্বে পাকিস্তান দাবি করেছিল যে,দহগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানের মূল ভূখন্ডের সাথে সরাসরি ভাবে যুক্ত।কিন্তু মানচিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে,এটি পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত হতে প্রায় ৮৫ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত।তখন থেকে এটি দুই দেশের মধ্যকার বিরোধের অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ছিট মহল সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনের জন্য চুক্তি হয়।কিন্তু এই চুক্তি বাস্তবায়িত হয় নাই,এবং দহগ্রাম সংক্রান্ত বিবাদ তখন পর্যন্ত বিরাজমান থেকে যায়।১৯৮২ সালে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়,যা ১৯৯২ সালে বাস্তবায়িত হয়।এই চুক্তি অনুসারে ভারত,দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীদের বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু) আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দেয় যা বর্তমানে তিনবিঘা করিডোর হিসেবে খ্যাত।
পূর্বে করিডোরটি দিনের ১২ ঘন্টা সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হত,এতে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হত কারণ সে সময় সেখানে কোন হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না।
স্বাধীন বাংলাদেশ ও ভারত রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যে সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ একটি দ্বি-পক্ষীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি।এটি ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের ১৬ তারিখে নয়াদিল্লীতে সম্পাদিত এবং বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং ভারতের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।বলা হয়েছে,এই চুক্তিটি দুই দেশের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব,আন্তরিক মনোভাব ও পারস্পরিক বিশ্বাস,আর সবার ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী এ দুজন মহান রাষ্ট্রনায়কের শান্তি ও সম্প্রীতির অন্তর্দৃষ্টির প্রতীক”এই চুক্তির অন্যতম বিষয় ছিল সমঝোতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার স্থল-সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন করা।
পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডোরটি ২৪ ঘন্টাই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
লেখক: আরাফাত সুলতান কার্নিজ।
সাবেক ছাত্রনেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।