সাজু মিয়ার বাড়ি পঞ্চগরে,শিক্ষকতা করেন কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।সে প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্ত্রী সভাপতি।বিয়ে করার জন্য ৩ দিনের ছুটি নিয়ে ৭ দিন পরে স্কুলে আসলে স্বামী-স্ত্রী মিলে সোকজ করে সাজু মিয়ার বেতন আটকে দিয়েছেন।বাড়ি যেতে আসতেই তিনদিন লাগে।তিনমাস পর মূল বেতন পেলেও স্থানীয় বেতন তিনি পাননি।
২.রঞ্জু মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধা,শিক্ষকতা করেন টেকনাফে।তিনি মা বাবার একমাত্র সন্তান।বাবা বেঁচে নেই,মা ক্যান্সারের রোগী।নিয়মিত থেরাপি দিতে হচ্ছে।রঞ্জুমিয়ার স্ত্রীর পিত্তথলির পাথর অপারেশন করাতে হয়েছে।ছোট বাচ্চা দুটিরও জ্বর-সর্দি লেগেই আছে।বহুদূরে শিক্ষকতা করার কারণে সবকিছু সামাল দিতে গিয়ে বেহাল দশা তার।কোনো কূল কিনারা করতে পারতেছেন না।দুচোখে আঁধার দেখছেন তিনি।
৩.সহকারি শিক্ষক আহমেদ আলির বাড়ি কুড়িগ্রাম,শিক্ষকতা করেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে।বেতন পান মাত্র ১২৫০০ টাকা(ইবতেদায়ি শিক্ষকদের বেতন মাত্র ৯৩০০ টাকা)।একবার বাড়ি যেতে আসতে বেতনের অর্ধেক চলে যায়।এ অবস্থায় নিজে চলবেন কিভাবে বা বাবা মায়ের সেবা করবেন কিভাবে?
পরিবারের কেউ মারা গেলে শেষ দেখারও সুযোগ পান না।নামগুলো রুপক হলেও এরকম হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যায়।
এখন কথা হলো বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেয় এনটিআরসিএ তাহলে তারা বদলি চালু করেন না কেন?বাংলাশের সকল পেশায় বদলি থাকলে এমপিওভুক্ত ইন্ডেক্সধারি শিক্ষকদের বেলায় বদলি চালু করতে সমস্যা কোথায়?
আমরা বদলি প্রত্যাশি শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন থেকে বদলির দাবিতে অনলাইনে ও মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।বদলি প্রত্যাশী ৭১ জন শিক্ষক বদলির দাবিতে মহামান্য হাইকোর্টে রীট করেছিলাম ২০১৯ সালে।
মহামান্য আদালতও বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন।যারা নিজ জেলা থেকে ৫০০-৮০০ কিলোমিটার দূরে শিক্ষকতা করছি তাদের কষ্টের কথা কেউ শোনে না,বদলির উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
শিক্ষা ব্যবস্থা যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তারা যদি অসহায় শিক্ষকদের কথা না শোনেন,বদলির ব্যবস্থা না করেন তাহলে যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে কিভাবে শ্রেণি পাঠদান চালাবেন?মানসিক যন্ত্রণায় থেকে কি শ্রেণিতে সফল পাঠদান সম্ভব?
ছাত্রছাত্রীদের জন্য সবসময়ই আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করি,নিজেদের সবটুকু উজার করে দিয়েই কষ্টগুলো ভেতরে রেখে হাসিমুখেই পাঠদান চালাই।বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যা দাম তাতে কিভাবে সম্ভব এই স্বল্প বেতনে জীবন চালানো?
তাছাড়া স্থানীয় শিক্ষকদের ও কমিটির সদস্যদের দ্বারা প্রায় সময়ই বাইরের শিক্ষকগণ নির্যাতন,নিপীড়ন ও হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন,বখাটেদের উৎপাত তো আছেই,শিক্ষামন্ত্রণালয়,মাউশি,এনটিআরসিএ,কারিগরি ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরে আমরা স্মারকলিপি দিয়ে বলেছিলাম
আগে ইন্ডেক্সধারি শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা করুন।তখন আমাদের ছেড়ে যাওয়া পদ ও নিয়মিত শূণ্যপদ সমন্বয় করে গণবিজ্ঞপ্তি দিন।তখন নিবন্ধিত সকলেই শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাবেন।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকট দূর হবে।আসন্ন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ৭০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হতে যাচ্ছে।বদলি চালু না করে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি কার্যকর হলে বদলি প্রতাশিদের নিজ এলাকায় যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।সেকারণে এখনই বদলি প্রথা চালু করা জরুরি।
আমরা বদলি প্রত্যাশি ইন্ডেক্সধারি শিক্ষকগণ ডাল-ভাত খেয়েই নিজ এলাকায় থেকে শিক্ষার মান উন্নয়নে অগ্রগামী থাকতে চাই।
বদলি প্রত্যাশী ইন্ডেক্সধারি শিক্ষকগণকে বঞ্চিত করে শিক্ষার মান উন্নয়ন কতটুকু সফল হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। সঙ্গত কারণেই আমরা বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকগণ নিজ নিজ এলাকা বা কাছাকাছি দূরত্বে থেকে প্রশান্তচিত্তে নতুন শিক্ষাক্রমের বিশাল কর্মযজ্ঞে ঝাপিয়ে পড়তে চাই।
লেখকঃ
গৌতম কুমার
সভাপতি
বদলি প্রত্যাশি এমপিওভুক্ত ইন্ডেক্সধারি শিক্ষক কমিটি-বদলি ৭১