বাংলাদেশের প্রথম ৬লেনের মধুমতী সেতু উদ্ভোধণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পর এবার চালু হলো মধুমতী সেতু। এটা হবে বাংলাদেশের প্রথম ৬লেনের সেতু।সোমবার দুপুর ১টা ১০মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের চামেলী হল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্ত্বপূর্ণ মধুমতী সেতুটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত মধুমতী সেতু।সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব ড.আহম্মদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন,খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিলস্নুর রহমান চৌধুরী,খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড.খন্দকার মুহিত উদ্দিন,নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি,নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্তুজা,নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান,পুলিশ সুপার মোসাঃ সাদিরা খাতুন,নড়াইল জেলা আওয়ামীরীগের সভাপতি এ্যাড.সুবাস চন্দ্র বোস,সাধার সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু,লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আজগর আলী,লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, প্রকল্পের পরিচালক শ্যামল ভট্টাচার্য,সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ প্রমুখ।
সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের ১০টি জেলার বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তি হলো।দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদীর ওপর এ সেতুর অবস্থান।সেতুর পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা ও পশ্চিম পাড়ে নড়াইল এর লোহাগড়া উপজেলা।সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান।নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা)স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে।
ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের(কংক্রিট)।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান,ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে।
সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০মিটার ও প্রস্থ ২৭দশমিক ১০মিটার। উভয় পাশে সংযোগসড়ক ৪ দশমিক ২৭৩কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০দশমিক ৫০মিটার। সেতু নির্মাণে ব্যয় ৯৫৯ দশমিক ৮৫কোটি টাকা।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা)অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।
২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি হয়।ওই বছরের ৫সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়।তখন থেকে ৩৬মাস ছিল মেয়াদকাল।পরে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এ সেতু চালু হওয়ার ফলে নড়াইল,যশোর,বেনাপোল স্থলবন্দর ও খুলনা থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী পরিবহন মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা হয়ে যাতায়াত করতে পারবে।এতে বেনাপোল ও যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব ১১৩কিলোমিটার,খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১কিলোমিটার কমবে।মধুমতী সেতু পারাপারের জন্য বড় ট্রাক ৫৬৫ টাকা,তিন বা ততোধিক এক্সসেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০ টাকা,দুই এক্সসেল বিশিষ্ট মাঝারি ট্রাক ২২৫,ছোট ট্রাক ১৭০টাকা,কৃষিকাজে ব্যবহ্নত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫টাকা,বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫টাকা,মিনিট বা কোস্টার ১১৫টাকা,মাইক্রোবাস,পিকআপ,রে-কার ৯০ টাকা,প্রাইভেট কার ৫৫ টাকা, অটোটেম্পো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা,অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান ২৫ টাকা,মোটরসাইকেল ১০টাকা এবং রিকশা,ভ্যান ও বাইসাইকেলের ক্ষেত্রে পাঁচ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই মধুমতী সেতুর উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত সপ্ন বাস্তবায়িত হলো।