বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে কালিতলা গ্রোয়েন বাঁধ ও বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকদের আকর্ষিত করার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়া জেলার তত্ত্বাবধানে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দর্শনার্থীদের ভীড় জমতে শুরু করে। বছরে ছয়টি ঋতু অন্যান্য ঋতুর তুলনায় বর্ষা ও শরৎ এই দুই ঋতুতেই দর্শনার্থীদের ভীড় জমে বেশি।তাছাড়াও সাপ্তাহিক ছুটি,ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং বিশেষ দিন গুলোতে ভীড় জমে এই বিনোদন কেন্দ্রে।শুধু কালিতলা গ্রোয়েনেই সীমাবদ্ধ নয় দিঘলকান্দি (প্রেম যমুনার ঘাট),যমুনা চরাঞ্চল দেখা এবং নৌকা দিয়ে নদী পথে ঘুড়িয়ে বেড়ানোর জন্য ভীড় জমায় দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা।বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা প্রায়ই কালিতলা-দিঘলকান্দি(প্রেম যমুনার ঘাট) এবং নৌকা যোগে নদী ভ্রমণ সহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে ঘুরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করি।বর্তমানে কালিতলা গ্রোয়েন বাঁধ সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করায় দর্শনার্থীদের মন আরও আকর্ষিত করবে বলেও জানান।সারিয়াকান্দি পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কমিশনার খোরশেদ আলম জানান,কালিতলা গ্রোয়েন বাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সংস্কারের কাজ চলছে।এখানে আগে পর্যটকদের যে ভীড় ছিল এখন তা অধিক গুনে বৃদ্ধি পেয়েছে।আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যেন আরও সুন্দর করতে পারি। বিনোদন কেন্দ্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য দর্শনার্থীসহ স্থানীয় জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান মতি জানান,সন্ধ্যার পর কালিতলা গ্রোয়েন কএ সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে লাইটিং সংস্কার সহ পর্যটকদের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে আধুনিক ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা অবাধে রাতের দৃশ্য উপভোগ করতে পারে।পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেশ কুমার চক্রবর্তী জানান,বাহিরে থেকে বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা যেন নির্বিঘ্নে চলাচল সহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশের বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক কাজ করবে।তিনি আরও জানান, বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে কেউ যেন অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারে এর জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজরদারিতে রাখবে।বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে কেউ কোনো প্রকার উশৃংখলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত)সবুজ কুমার বসাক জানান,এ উপজেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে স্বাভাবিক ও মনোরম পরিবেশ বজায় রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান,কালিতলা গ্রোয়েনে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করেছি।রাস্তার দুইপাশে গাছের মাঝে ফাঁকা জায়গায় নতুন গাছ রোপন করা হবে। এছাড়াও পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য বড় পরিসরে কিছু ষ্টীলের ছাতা স্থাপন করা হবে।গ্রোয়েনের মধ্যে সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই পাশে ছোট ছোট দোকানগুলোকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।তিনি আরও জানান, দিঘলকান্দি(প্রেম যমুনার ঘাট)ও মথুরাপাড়া হার্ড পয়েন্ট সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।উল্লেখ্য, যমুনা নদীকে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা,দীঘলকান্দি (প্রেম যমুনার ঘাট)ও মথুরাপাড়ায় প্রায় ২২২ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রোয়েন বাঁধ ও হার্ড পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়। এতে করে যমুনা নদীর ডান তীর ভয়াবহ ভাঙ্গন থেকে বসত বাড়ি,ফসলি জমি সহ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষা পেয়েছে।ফলে কালিতলা যমুনা নদীর প্রবাহকে একদিকে বাধা প্রদান করেছে। সেই সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে।
মোঃ ফরহাদ হোসেন
বগুড়া প্রতিনিধি
০১৭৫৫৪২৭৭৯২