রিপোর্টারঃ এস আই সুমন–বগুড়ায় আলোচিত বিধান চন্দ্রকে অপহরণের পর হত্যার রহস্য উন্মোচন এবং সেই সাথে অপহরণ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে অপহরণকারীরা তাকে হত্যা করে।মাটিতে পুঁতে রাখা তার লাশ ও আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবির একটি টিম ও কাহালু থানা পুলিশের একটি টিম যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে অপহরণ ও এই কান্ডের রহস্য। বগুড়া ডিবি সূত্র জানায়, গত ১২ এপ্রিল অনীল চন্দ্র সরকার(৪৬)নামে এক ব্যক্তি বগুড়া কাহালু থানায় হাজির হয়ে জানান যে, তার ছেলে বিধান চন্দ্র সরকার(২০)কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এ বিষয়ে তিনি কাহালু থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি(জিডি)করেন।এরপর তাৎক্ষনিকভাবে এই সংক্রান্তে অফিসার ইনচার্জ কাহালু থানাসহ অন্যান্য অফিসার ফোর্সরা নিখোঁজ বিধানকে খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে।
পরবর্তীতে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে কিছুদিন পর বিধানের বাবা অনীল চন্দ্র সরকারকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি মোবাইলে ফোন দিয়ে জানায়,তার ছেলে বিধান তাদের হেফাজতে আছে।তার ছেলেকে ফেরত পেতে চাইলে ছয় লাখ টাকা মুক্তিপন দিতে হবে।পরে এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম পিপিএম এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ স্নিগ্ধ আখতার পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে ডিবি বগুড়া’র ইনচার্জ মোঃ সাইহান ওলিউল্লাহ এর নেতৃত্বে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি বগুড়া’র একটি টিম ও কাহালু থানা পুলিশের একটি টিম যৌথ অভিযান শুরু করে।অভিযানকালে গত ২৩ জুন কাহালু ও বগুড়া সদর এলাকা থেকে ঘটনার সাথে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীসহ ওই ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলো কাহালু উপজেলার সেবা কলমা গ্রামের বিদুচন্দ্র প্রামাণিকের ছেলে বিপুল চন্দ্র প্রাং(৩৫),একই গ্রামের জিতে নচন্দ্র বর্মনের ছেলে দিনেশ চন্দ্র প্রামানিক ২৫ ও যুক্ত বাবু প্রামানিকের ছেলে উৎপল চন্দ্র ২৪ এসময় তাদের কাছ থেকে ১টি বাটন মোবাইল ফোন(সিমকার্ডসহ)জব্দ করা হয়।যা দিয়ে মুক্তিপন দাবী করা হয়েছিল।
ডিবি সূত্র আরো জানায়,গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে,আসামিরা ও ভিকটিম বিধান পূর্ব পরিচিত।আসামিরা বিধানের বাবার নিকট থেকে অর্থ আদায় করার জন্য তাকে আটক করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১১ এপ্রিল আসামিরা কৌশলে কাহালু উপজেলার শিবাকলমা গ্রামের পূর্বে কাহালু থানার সীমান্তবর্তী ভাদাখাল(সরকারী নালা)নামক একটি জন মানবশূন্য এলাকায় সন্ধ্যার পরে নিয়ে যায়।তারপর তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একত্রে ভিকটিম বিধানসহ মদ্য পান করে।এতে বিধান নেশাগ্রস্থ হলে পূর্ব পরিকল্পনামতে গ্রেফতারকৃত আসামি বিপুল ও উৎপল বিধানের সাথে কথা বলতে থাকে এবং গ্রেফতারকৃত অপর আসামি দিনেশ পেছন থেকে বিধানের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এতে বিধান মাটিতে পড়ে গেলে আসামি উৎপল তার কাছে থাকা অন্য হাতুড়ি দিয়ে বিধানকে আঘাত করে।তবে তাদের পরিকল্পনা ছিলো বিধানকে কে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করে ফেলা।কিন্তু আঘাত গুরুত্বর হওয়ার কারণে তারা বিধানকে তাৎক্ষনিক হত্যার সিন্ধান্ত নেয়।হাতুড়ির আঘাতের ফলে বিধান পাশের নালায় পড়ে গেলে আসামিরা তাকে পানিতে মাথা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে।এরপর তারা লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে পাশেই মাটি খুড়ে পুতে রাখে।কিন্তু তাড়াহুড়ার কারণে আসামিরা কাজটি ঠিকমত করতে পারেনি।পরদিন ভোরবেলা আসামি বিপুল কি অবস্থা জানার জন্য লাশ পুতে রাখার স্থানে গেলে দেখতে পায় যে,শিয়াল মাটি খুড়ে লাশের একটি হাত বের করে ফেলেছে।এরপর বিপুল হাতটি মাটি চাপা দেয়।
এছাড়া বিপুল ৪/৫ দিন যাবৎ বিষয়টি নজরদারি করে এবং আসামি দিনেশ ও উৎপলের সাথে আলোচনা করে অন্যস্থানে আরো ভালোভাবে পুঁতে রাখার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে আসামীরা ৪/৫ দিন পর লাশটি সরিয়ে প্রায় ৫০ গজ দূরে জমি সেচের ড্রেনের নিচে গভীর করে পুঁতে ফেলে।ঘটনাটি প্রায় দেড়মাস অতিবাহিত হবার পরেও কেউ কোন কিছু না বুঝতে পারার কারণে তারা মুক্তিপন আদায়ের লক্ষে বিধান এর বাবা অনীল চন্দ্রকে মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপন দাবি করতে শুরু করে,পরে বিধানের পরিবারের দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীদের শনাক্তপূর্বক জেলা গোয়েন্দা শাখা,ডিবি বগুড়ার টিম একটানা অভিযান পরিচালনা করে ওই আসামিদের গ্রেফতার করে।পরে আসামিরা বিধানকে অপহরণ,ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি ও হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার বিবরণ দেয়।
এস আই সুমন
স্টাফ রিপোর্টার,বগুড়া।
তারিখঃ ২৩/৬/২০২৩ ইং