ভোলার সর্বস্তরের জনগণের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের পূর্বে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আসন্ন সংসদ অধিবেশনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করার দাবিতে ভোলা সদর উপজেলায় মঙ্গলবার সকাল ১১টায় (৩০ মে ২০২৩) এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করেছে ভোলা যুব ফোরাম,মা-সংসদ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, এবং সুশীল সমাজ।র্যলিটি ভোলা প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থানসমূহ প্রদক্ষিণ করে ভোলা প্রেস ক্লাবে এসে শেষ হয়। শতাধিক মানুষ এই বর্ণাঢ্য র্যালিতে অংশ নেন।ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্যা রুরাল পূওর-ডর্প এর সহযোগিতায় আয়োজিত র্যালির শুরুতে বক্তব্য রাখেন ভোলার প্রবীণ সাংবাদিক ও দ্বীপবাণী পত্রিকার সম্পাদক মো: আবু তাহের, সরকারী সেখ ফজিলাতুন্নেছা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসার রুহুল আমীন জাহাঙ্গীর, ভোলা প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ভোলা প্রতিনিধি অমিতাভ রায় অপু, ডরপ প্রতিনিধি,যুব ফোরাম এবং মা-সংসদ সদস্যগণ।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ অনুসারে বাংলাদেশে প্রায় পৌনে চার কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে।কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ।তামাকের এই বহুল ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০১৮ অনুসারে,তামাকজনিত নানা রোগে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।এছাড়াও লাখ লাখ মানুষ হৃদরোগ,ডায়াবেটিস,দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসতন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।বাংলাদেশ সরকার জনস্বাস্থ্যের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এফসিটিসি’র আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০০৫ প্রণয়ন করে। ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০২২ সালে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বিশ^মানে উন্নীত করতে সংশোধনী প্রস্তাব প্রণয়ন করে। ১৬ জুন ২০২২ তারিখে সংশোধনী প্রস্তাব জনমত যাচাইয়ের জন্য জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে এবং সংশোধনীর পক্ষে ১৬০০০ জনেরও অধিক ইতিবাচক মতামত প্রদান করেন।মতামত প্রদানকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ১৬৯ জন সাংসদ। ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে চূড়ান্ত সংশোধনীটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রাথমিক যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রীপরিষদে প্রেরণ করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ও সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অন্যতম ৬টি ধারা হলো- সকল প্রকার উন্মুক্ত স্থান এবং গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা,বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক দ্রব্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা,ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি,উৎপাদন,ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা,তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা শলাকা বিক্রয় বন্ধ করা এবং বিড়ি ও সিগারেটের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা।
ভোলা প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু বলেন, “তামাকজনিত নানা রোগে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করেছে। আমাদের দাবি হল যত দ্রুত সম্ভব এটি মন্ত্রীপরিষদে অনুমোদন করিয়ে সংসদে উত্থাপন ও পাশ করা হোক।”সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসার রুহুল আমীন জাহাঙ্গীর মন্তব্য করেন, এখনই যদি তামাকের কুপ্রভাব এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সরকার সচেতন হয় তাহলে অনেক প্রাণ বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও তরুণসমাজ রক্ষা পাবে।“বাংলাদেশের অপ্রাপ্তবয়স্কদের (১৩-১৫ বছরের মধ্যে)মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ মানুষ কোন না কোন ধরনের তামাক ব্যবহার করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে অপ্রাপ্তবয়স্কদের(১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী) মধ্যে ৪৪ শতাংশ মানুষ তামাক কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ধূমপান ও তামাক গ্রহণে আগ্রহী হয়।এটি পরবর্তীতে অন্যান্য নেশায় আসক্ত করে।আইনটির কঠোর প্রয়োগ অল্পবয়সে তামাকজাত পণ্য সেবন নিরুৎসাহিত করবে বলে আমি মনে করি”ভোলার প্রবীণ সাংবাদিক ও দ্বীপবাণী পত্রিকার সম্পাদক মো: আবু তাহের,র্যালির শুরুতে তার বক্তব্যে বলেন, “তামাক কোম্পানি সিএসআর কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে থাকে।খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটিতে তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা’ বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই এটি দ্রুত পাশ করা প্রয়োজন।”
“যদি আসন্ন সংসদ অধিবেশনেই আইনটি পাশ করা যায় তাহলে তামাক কোম্পানিগুলোর অপতৎপরতা বন্ধ হবে।জনস্বাস্থ্যেরও প্রভূত উন্নতি হবে বলে আমি মনে করি”তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশের দাবিতে নানাবিধ স্লোগানে মুখরিত র্যালিটি সাজানো হয় রঙ্গীন প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনে।র্যালিতে আরও অংশ নেন ভোলা যুব ফোরাম,মা-সংসদ,প্রান্তিক জনগোষ্ঠি,সুশীল সমাজ এবং সাংবাদিকবৃন্দসহ প্রমুখ।ডর্প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত।এরই ধারাবাহিকতায় ডর্প বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।