চীনে ইউঘুর মুসলিম নির্যাতন বন্ধে বেইজিংকে জোরালো চাপ দিতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান।
চীনের জিংজিয়াং প্রদেশে চীনা সরকার কতৃক উইঘুর মুসলমানদের উপর চালানো নির্যাতনকে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন দাবী করে করে জাতিসংঘকে ও মুসলিম বিশ্বকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছে আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদ। পাশাপাশি চীনের পণ্য বয়কটের জন্য দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ ও আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন ইসলামী দলের শীর্ষনেতারা বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, চীনের ২২ লাখ তুর্কি ও উইঘুর মুসলিমদের দীর্ঘদিন যাবৎ গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন নীপিড়ন, জোরপূর্বক আটকে রাখার প্রতিবাদে এই ‘প্রতিবাদ ও আলোচনা সভার’ আয়োজন করেছে। চীনা সরকার মিডিয়ার সকল কর্মকাণ্ড স্তব্ধ রেখে বছরের পর বছর ২২ লাখ মুসলিমকে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্যাতন, যৌন নীপিড়ন, হত্যাসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীনারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিল।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এদেশের মুক্তিকামী জনতা তাদের সহযোগিতা পায় নি।
মিয়ানমারের সরকারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসন বন্ধে চায়নাদের
পরোক্ষ যোগসাজশ রয়েছে। চীনা সরকার মানবাধিকার কর্মী, সংবাদকর্মী, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এমনকি সংবাদ সংগ্রহে আগ্রহী এমন কাউকে চীনের উইঘুরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, পুরো পৃথিবীকে অন্ধকারে রেখে চীনা সরকার এই সকল অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও সামান্যতম সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন বিবিসি, আল-জাজিরা বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে কিছু কিছু সংবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। যাহা দেখে ও শুনে আমরা হতবাক হয়েছি। পুরো বিশ্বের মানুষ এটা মেনে নিতে পারেনি। আমরা চীনা সরকারের এ ধরনের গর্হিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ মিত্ররা চীনের উপর নামেমাত্র অবরোধ আরোপ করে দায়সারা দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু চীনের দানব সরকার এই সামান্য অবরোধ ও চাপে ক্ষ্যান্ত হয়নি এবং হবেও না। তাকে থামাতে হলে বিশ্বের সকল দেশ মিলে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ করিয়ে চীনের উপর ব্যাপক ভিত্তিক অবরোধ আরোপ করে চাপ তৈরি করুন। অন্যথায় চীনা দানব সরকার কোনভাবেই গর্হিত কর্মকাণ্ড হতে পিছপা হবে না। তারা অর্থনৈতিকভাবে ধনী দেশ হওয়ার কারণে সারা বিশ্বের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং মুসলিমদের হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, যৌন নীপিড়ন ইত্যাদি অবলীলায় চালিয়ে গেলেও কেউ তাদের আটকাতে সাহস পায় না।
‘তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আদলে সারা বিশ্বের বাণিজ্য করিডোর দখল নেওয়ার ঘৃণ্যতম চেষ্টায় লিপ্ত। এভাবে চলতে থাকলে যেকোন সময় শ্রীলংকার মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চায়না সরকারের থাবায় আক্রান্ত হয়ে একসময় নিঃস্ব হয়ে যাবে। আমরা সারা বিশ্বের সকল সরকারগুলোকে দ্যার্থহীনভাবে জানাতে চাই এখনই চায়না সরকারের সকল অপরাধ কর্মকাণ্ড বন্ধের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিন। নাহলে একসময় তারা বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশকেও গিলে ফেলবে,’ যোগ করেন বক্তারা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বক্তারা বলেন, আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, আপনিতো এখন বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে সমাসীন। আপনার অদম্য সাহস এবং সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে এবং আপনি সারাবিশ্বের প্রশংসা ও কুড়িয়েছেন। আপনার সাহসিকতা সারাবিশ্বে প্রশংসিত, আপনার সাহসিক নেতৃত্ব মুসলিমদের পক্ষে যাবে সেটাই আমরা আশা করি। আপনিতো পারেন চীনের মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে। সাহস করে বলুন দেখবেন আপনার পাশে আরও অনেক বিশ্ব নেতা ও দেশ দাঁড়িয়ে যাবে। আর এতেই চীনের উইঘুরসহ বিভিন্ন অংশে বিপদগ্রস্থ আমার ভাইবোনেরা চীনা সরকারের করাল থাবা থেকে মুক্তি পাবে। আপনি নির্যাতিত মুসলিমদের পক্ষে কথা বলুন, মহান আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করবেন এবং এর প্রতিদান দেবেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আসুন আমরা সকলে মিলে দানবের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সারাবিশ্বে চায়না পন্য বর্জনের আওয়াজ তুলি এবং নির্যাতিত সরাবিশ্ব ও উইঘুর মুসলিম ভাইবোনদের জন্য দোয়া করি তিনি যেন চীনের ফেরাউন সরকারের হাত থেকে তাদের মুক্তি দান করেন এবং বিজয়ীবেশে, ঈমানদার হিসেবে তাদের কবুল করেন।
আলোচনা সভাটি আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মুফতি ওসমান গনি চৌধুরীরর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়, এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, প্রধান আলোচক ছিলেন, আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী ফারুকী, প্রধান বক্তা ছিলেন, UCTC ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. বেলান নুর আজিজী প্রধান বক্তা দৈনিক যুগান্তরের সহ সম্পাদক মুফতি তানজিল আমীর, সংদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ইয়াসীন হাবিব, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আব্দুল জাব্বার, মাওলানা আব্দুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা অাব্দুর রহিম, কেন্দ্রীয় সংসদের উপদেষ্টা মাওলানা জসিম উদ্দীন, কক্সবাজার ছাত্র ফোরাম সভাপতি এইচ, এম কফিল উদ্দীন, ইসলামী ছাত্র সেনার কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কেএম খাজা বাকি বিল্লাহ, আলেম মুক্তিযোদ্ধা কক্সবাজার জেলা উপদেষ্টা মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ ইলিয়াস, বিশিষ্ট লেখক, খন্দকার হামিদ উল্লাহ কেন্দ্রীয় সংসদের শিক্ষা সম্পাদক রিদওয়ানুল কাবীর, কক্সবাজার জেলা যুব আন্দোলনের সদস্য সাইফুল্লাহ চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আহবায়ক আর এ এম ফরিদুল আলম, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মাওলানা শফকত হুসাইন চাটগামী, চৌধুরী, মাওলানা আতা উল্লাহ ত্বকী, হাবিবুর রহমান হবিব প্রমুখ।
রিপোর্টারঃ মুজাহিদ ওসমান আল হুমাম।
বিঃদ্রঃ-রাষ্ট্রীয় বিরোধী নিউজের জন্য নিউজ পোর্টাল দায়ভার বহন করবে না।