গাইবান্ধার জামালপুর শাহী গায়েবি মসজিদের ঘটনা।
গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের পূর্বপাশে অবস্থিত জামালপুর শাহী মসজিদ।এই মসজিদকে ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস।শুক্রবার (১০ডিসেম্বর)বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়,মসজিদটি দেখেতে প্রচুর দর্শনার্থী ভীড় করেছেন।
পুরোনো এই মসজিদ সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে,ইংরেজ শাসনামলে মসজিদটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাটির নিচে চাপা পড়ে।মসজিদ এলাকায় কোনো লোকবসতি না থাকায় বনজঙ্গলে ছেয়ে থাকা মসজিদটি সম্পর্কে মানুষজন খুব একটা জানার সুযোগ পায়নি।
ষাটের দশকের প্রথম দিকে গাইবান্ধা মহকুমা প্রশাসক হক্কানি কুতুবউদ্দিন নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এসডিও হিসেবে দায়িত্ব পান।তিনি স্থানীয়দের কাছে ওই মসজিদের কথা শোনেন।পরে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মসজিদটি অনুসন্ধান শুরু করেন।
কিন্তু মসজিদটির জায়গায় বিশাল বট গাজ গজিয়ে ওঠায় মসজিদটি বটবৃক্ষের আড়ালে ঢাকা পড়ে ছিল।হঠাৎ একদিন প্রচণ্ড ঝড়ে বট গাছটি ভেঙে পড়লে স্থানীয় লোকজন মসজিদটি দেখতে পায়। সেই থেকে মানুষ মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদ হিসেবে অবহিত করতে থাকে।
জনশ্রুতি আছে,মসজিদটি উদ্ধারের কিছুদিন পর সিলেট থেকে আগত এক কামেল পুরুষ হজরত শাহ্ জামাল(রহ.)স্বপরিবারে ওই এলাকায় আগমন করেন।তিনি মসজিদটি দেখাশুনা শুরু করেন।সেই থেকে মসজিদটির নামকরণ হয় জামালপুর শাহী মসজিদ।
মসজিদের ইতিহাস প্রসঙ্গে লোকমুখে আরও প্রচলিত আছে,তৎকালীন সময়ে সৈয়দ ভোম আলী ভারতের শিলিগুড়ি থেকে সুলতান মাহমুদের আমলে হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতির নির্দেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এই এলাকায় এসে হজরত শাহ জামালের সঙ্গে মিলিত হন।সম্ভবতঃ তারাই এই মসজিদ নির্মাণ করেন।এ হিসেবে মসজিদটি প্রায় ৭০০বছর আগে নির্মিত।
এর পর হজরত শাহ জামালের নামানুসারে ইউনিয়ন ও গ্রামের নামকরণ করা হয়- জামালপুর। মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে পীরে কামেল হজরত শাহ জামাল (রহ.)-এর মাজার।
মসজিদের জমির কাগজপত্রে দেখা যায়, ৪০সনের রেকর্ড অনুযায়ী মসজিদের ১৬শতক জমির মালিক ছিলেন বড় জামালপুর গ্রামের মরহুম খন্দকার আবদুল মজিদ গং পরবর্তীতে মসজিদের নামে তারা জমিটি লিখে দেন।ফলে এ মসজিদের দাতা আবদুল মজিদ গং
জামালপুর শাহী মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ মো.মাহাবুর রহমান জানান মসজিদটি বাহির থেকে অনেক বড় মনে হলেও মসজিদের ভেতরে শুধুমাত্র দুই কাতারে ৬০জন মুসল্লি নিয়ে নামাজ আদায় করা যায়।বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এলাকার লোকজন মসজিদের মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে সামনের দিকে(সংযুক্ত)মসজিদ ভবন নির্মাণ করা হয়েছ।মসজিদের ২য় তলার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।এখন প্রায় ৭’শ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজহার আলী সরকার বলেন,প্রতি শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষজন মসজিদে মান্নতের নগদ টাকা,গরু-ছাগল,হাঁস-মুরগি,চাল ও মিষ্টি নিয়ে আসেন। অনেকে রান্না খাবারও শিন্নি হিসেবে বিতরণ করেন। এলাকাবাসীর ধারণা,যে কেউ যেকোনো নিয়তে মান্নত করলে আল্লাহর অশেষ রহমতে তা পূরণ হয়।
তিনি আরও জানান,ধর্মপ্রাণ মানুষের সাহায্য-সহযোহিতা ও মান্নতের অর্থ ইত্যাদি দিয়ে স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে মসজিদ পরিচালিত হচ্ছে।
জামালপুর শাহী মসজিদ কমিটির সভাপতি খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আগের চেয়ে মসজিদটি অনেক বড় করে সম্প্রসারণ করা হয়েছে।আরও অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। অর্থাভাবে মসজিদের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে।